December 22, 2024, 8:01 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক:
জামায়াতে ইসলামীর নেতিবাচক ভূমিকা তুলে ধরা হয়নি পাঠ্যবইয়ে। পর্যাপ্ত এবং যথার্থ তথ্য নেই। ২০১২ সালে সম্পাদনার সময় পুরো বই দেখেছি কী-না আমার মনে নেই। নবম শ্রেণির পাঠ্যবই পৌরনীতি ও নাগরিকতা বইয়ের সম্পাদক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশীদ বইটি দ্রুত প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জামায়াত সম্পর্কে ছোট করে হলেও পূর্ণ তথ্য দিয়ে নতুন করে ছেপে বই শিক্ষার্থীদের হাতে দেয়া উচিত।
মঙ্গলবার বিকেলে অনলাইনে ‘পাঠ্যবইয়ে জামায়াত’ শিরোনামে আলোচনার আয়োজন করে স্পেশাল নিউজ ২৪.কম। টেলিফোনে কথা বলেন, বইটির সম্পাদক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশীদ। কথা বলেন, শিক্ষা বিষয়ক সাংবাদিক মোস্তফা মল্লিক এবং কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের শিক্ষক মীর জাহিদ। আলোচনা সঞ্চালনা করেন স্পেশাল নিউজ ২৪.কম এর সম্পাদক হাসান জাহিদ।
এর আগে নবম ও দশম শ্রেণির পৌরনীতি পাঠ্যবইয়ে মারাত্মক অসংগতি রয়েছে বলে প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিক। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠান। এতে বলা হয়, ‘দেশের নবম ও দশম শ্রেণির ছাত্রদের পৌরনীতি বিষয়ক পাঠ্যবইয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পরিচয়পর্বে গুরুতর ধরনের অসংগতি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। রাজনৈতিক দলের পরিচিতিতে যুদ্ধাপরাধী রাজনৈতিক দল ‘বাংলাদেশ জামায়েতে ইসলামী’কে রাজনৈতিক দল হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে দলটির ঘৃণিত মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো উল্লেখ নেই। ইতিহাস এ কথা বলে যে জামায়েতে ইসলামী ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে সশস্ত্র অবস্থান নেয় এবং মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষের নির্মম হত্যাকা- ও চার লাখের অধিক নারী ধর্ষণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। তাদের যুদ্ধাপরাধের কারণে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল জামায়াতে ইসলামীকে যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে শনাক্ত করেছে এবং দেশের সর্বোচ্চ আদালত গণহত্যার দল হিসেবে জামায়াতের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করেছে। তাই কোনো অবস্থাতেই জামায়েতে ইসলামীকে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক দল হিসেবে উপস্থাপন করা যায় না। এই বিকৃত তথ্যমূলক পাঠ্যবই আমাদের কোমলমতি ছাত্রদের শুধুমাত্র বিভ্রান্তই করবে না, একইসঙ্গে সত্য জানা থেকে বিরত রাখবে। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেনÑ আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, হাসান আজিজুল হক, অনুপম সেন, শামসুজ্জামান খান, রামেন্দু মজুমদার, সারওয়ার আলী, ফেরদৌসী মজুমদার, আবদুস সেলিম, মামুনুর রশীদ, মফিদুল হক, শফি আহমেদ, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, মুনতাসীর মামুন, শাহরিয়ার কবির, সারা যাকের, লাকী ইনাম, গোলাম কুদ্দুছ, শিমূল ইউসুফ, মুহাম্মদ সামাদ, হাসান আরিফ ও নির্মলেন্দু গুণ।
স্পেশাল নিউজ ২৪.কম-এর আলোচনায় কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের শিক্ষক মীর জাহিদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ^াসীরা যে বিবৃতি দিয়েছে তা যতার্থ। তিনি বলেন, দেখা উচিৎ এটা কেন হলো, কীভাবে হলো? কোথায় ত্রুটি তা খুঁজে বের করতে বিস্তর আলোচনা হওয়া দরকার। তিনি বলেন, ২০১০ সালের শিক্ষানীতিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাইরে কিছু নেই। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের পরিচয় দেয়া হয়েছে বইতে। সেখানে জামায়াতের নাম কেন থাকবে? এই দলের নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। মুক্তিযুদ্ধে এদের অবস্থান ছিলো ঘৃণিত।
শিক্ষা বিষয়ক সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা মল্লিক বলেন, পাঠ্যবইয়ে ভুল হওয়ার কোন সুযোগ নেই। বই সম্পাদনার দায়িত্বে থাকা হারুন স্যারের এখনকার বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। মল্লিক বলেন, যারা সময় দিতে পারবেন তাদেরকেই এ ধরণের গুরু দায়িত্ব দেয়া উচিৎ।
বইটির সম্পাদক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশীদ বলেন, এটি যদি দ্রুত প্রত্যাহার করার জন্য পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। যদি দ্রুত এ কাজ সম্পন্ন না হয় তাহলে চিঠি দিয়ে সম্পাদক হিসেবে নাম প্রত্যাহার করে নেবেন- বলেন অধ্যাপক হারুন। তিনি বিবৃতিদাতাদেরও সাধুবাদ জানান তিনি।
Leave a Reply